উখিয়া নিউজ ডেস্ক::
কক্সবাজার শহরের বিভিন্ন এলাকায় অবৈধভাবে পরিচালিত কোচিং বাণিজ্যে অভিযান চালিয়েছে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় টের পেয়ে ছাত্রদের রেখে পালিয়ে গেছেন অসাধু শিক্ষকরা।
ষষ্ঠ শ্রেনীতে ভর্তি পরীক্ষাকে টার্গেট করে প্রতিবছরের ন্যায় এবারো কিছু অসাধু শিক্ষক বেপোরায়াভাবে কোচিং বাণিজ্যে নেমে পড়েছে। সরকারের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সরকারি স্কুলের শিক্ষকরা অবৈধ ভর্তি কোচিং বাণিজ্যে লপ্তি রয়েছেন। এতে বেসরকারি স্কুলের শিক্ষকরাও সমানতালে কোচিং বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েছে।
১৫ থেকে ২০ দিন পড়ানো হবে, তার বিনিময়ে হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতিজন থেকে ২ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা। শুধু তাই নয় ভর্তির নিশ্চয়তা দিয়ে যে যার মতো করে ভাগিয়ে নিচ্ছে ছাত্রদের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক জানান, এসব কোচিংবাজ শিক্ষকরা যে প্রশ্নপত্র তৈরি করে তা দিয়ে পরীক্ষা নেয়া হয়, পরীক্ষার সময় ছাত্রদের দেখিয়ে দেবে, খাতা নিরীক্ষণের নম্বর বাড়িয়ে দেবে, প্রশ্নপত্রে যা আসবে তা কোচিং এ শিখানো হবে। শহরের দুই সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষক এমন প্রলোভন দেখিয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কোচিং করতে বাধ্য করছে।
এসব নানা অভিযোগ পেয়ে আজ মঙ্গলবার ৫ নভেম্বর দুপুরে অভিযান পরিচালনা করেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা প্রিয়াংকা ও নাসরিন বেগম সেতু। এসময় উপস্থিত ছিলেন জেলা শিক্ষা অফিসার সালেহ উদ্দিন চৌধুরী।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খবর পেয়ে শহরের গোলদিঘীরপাড়স্থ উকিল পাড়ায় কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আবু সুফিয়ান ও আনোয়ারুল আজিমের কোচিং সেন্টারে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে। এ সময় কোচিং সেন্টারে এই দুই শিক্ষকদের পড়ানো অবস্থায় শিক্ষার্থীদের পাওয়া যায়। এই দুই শিক্ষককে প্রথমবারের মতো সতর্ক করা হয়েছে।
একই সময় পাশের আর দুই বিল্ডিংয়ের প্লটে সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ইকবাল ফারুক ও বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের অপর এক শিক্ষকের কোচিং সেন্টারে অভিযান চালানো হয়। অভিযানের আগেই টের পেয়ে এই দুই শিক্ষক শিক্ষার্থীদের রেখেই পালিয়ে যায়। শিক্ষক ইকবাল ফারুকের কোচিং সেন্টারে দেখা যায়, ছোট একটা কক্ষে প্রায় একশত শিক্ষার্থীরা গাদাগাদি করে বসে আছে।
যে বেঞ্চে ৩ জনের বেশি বসা সম্ভব না সেই বেঞ্চে বসানো হয়েছে ৬ জন শিক্ষার্থীরা। এতে শিক্ষার্থীদের লেখার কোনো সুযোগ নেই। এই অবস্থা দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সালেহ আহমদ চৌধুরী। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘শিক্ষকদের কোচিং এর পক্ষে থাকলেও এখন কোচিং-এর এমন বিশ্রি পরিবেশে দেখে শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে লজ্জা লাগছে। ‘
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা প্রিয়াংকা কোচিং এ উপস্থিত থাকা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে জিজ্ঞাসা করলে শিক্ষার্থীরা বলে দেন, ২২ শত টাকা করে নেয় তাদের ইকবাল ফারুক স্যার। শুধু তাই নয় নোট দেবে বলে আরো দুইশত টাকা আদায় করে। গাদাগাদি করে বসে পড়তে তাদের অনেক কষ্ট হয় বলেও জানান তারা। ইকবাল ফারুকের সঙ্গে সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আনসারুল হক এমন অবৈধ কোচিং বাণিজ্যে জড়িত রয়েছে।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের খবর পেয়ে কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচচ বিদ্যালয়ের শিক্ষক রফিকুল ইসলাম, সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক, প্রাইমারি শিক্ষক জালালসহ প্রায় ডজন খানেক শিক্ষক ছাত্রদের রেখে পালিয়ে যায়। শিক্ষক আবু তৈয়বের বাসায় কোন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা পাওয়া যায়নি।
জানতে চাইলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা প্রিয়াংকা বলেন, প্রথমবারের মতো যাদের পাওয়া গেছে এসব শিক্ষকদের সতর্ক করা হয়েছে এবং যেসব শিক্ষক কোচিং বাণিজ্যে জড়িত রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে জেলা শিক্ষা অফিসার বরাবরেই অভিযোগ করা হবে।
এ ছাড়া অভিযান চলাকালীন বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেক শিক্ষক কোচিং সেন্টার বন্ধ করে গা ঢাকা দিয়েছে বলে তিনি জানান।
এই অবস্থা দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সালেহ আহমদ চৌধুরী। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘শিক্ষকদের কোচিং-এর পক্ষে থাকলেও এখন কোচিং-এর এমন বিশ্রি পরিবেশ দেখে শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে লজ্জা লাগছে। ‘ তিনি আরো বলেন, ‘এভাবে শিক্ষকরা কোচিং করায়। এমন গাদাগাদি ও চুক্তিভিক্তিক শিক্ষার্থীদের কোচিং করানো সত্যিই লজ্জাজনক। এ বিষয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশনায় জড়িত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ‘ সুত্র: কালের কন্ঠ
পাঠকের মতামত